History of the college

Know Us Better

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের ছোট্ট একটি জেলা মেহেরপুর। এ জেলার রয়েছে প্রায় দু’হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশেষত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঘটনায় মেহেরপুরের মুজিবনগর সূতিকাগারের ভূমিকা পালন করায় এ জেলার ইতিহাস হয়েছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। সেই অর্থে বলা যায় ইতিহাসের বাঁক বদলের ধারায় গোটা বাঙালী জাতির একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক পরিচয়কে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে একাত্তরের মুজিবনগর। সেই মুজিবনগরের স্মৃতি বিজড়িত মেহেরপুর বাংলাদেশের জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৫৭ সালে বৃটিশ আমলে নদীয়া জেলার অন্তর্গত মহকুমা হিসেবে মেহেরপুর স্বীকৃতি পায়। তখন মেহেরপুর মহকুমার ৪টি থানা ছিল যথা-মেহেরপুর সদর, গাংনী, করিমপুর ও তেহট্ট। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় করিমপুর ও তেহট্ট থানা ভারতের মধ্যে পড়ে যায়। ফলে আয়তনের দিক থেকে মেহেরপুর হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে ছোট্ট এবং সীমান্তবর্তী মহকুমা। এরপর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে এ অঞ্চলের জমিদারগণ ও অবস্থাপন্ন লোকেরা মেহেরপুর ছেড়ে চলে যায়। ফলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সে শুন্যতার পূরণ দীর্ঘদিনেও হয়নি। সেই থেকে অবহেলিত ও পশ্চাদপদ হয়ে পড়ে মেহেরপুর। ১৯৭১ এ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতার সূতিকাগার হওয়া সত্ত্বেও মেহেরপুরের কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নয়ন হয়নি। ১৯৮৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি জেলার মর্যাদায় অভিষিক্ত হয় মেহেরপুর। মেহেরপুর জেলা ২৩.৩৫/ থেকে ২৩.৫৮/ ডিগ্রী অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৬/ থেকে ৮৮.৫৬/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। ছোট্ট এ জেলার উত্তরে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানা; দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনগর ও দামুড়হুদা থানা; পূর্বে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। মেহেরপুরের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম জেলা মেহেরপুর। মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী থানা মিলিয়ে এ জেলার মোট আয়তন ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার।

মেহেরপুর কলেজ :

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অবহেলিত ও পশ্চাদপদ হয়ে পড়ে মেহেরপুর। ১৯৬১ সালে এলাকার উন্নয়নকল্পে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি নজর দেওয়া হয়। মেহেরপুর মহকুমায় কোন কলেজ না থাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সকলের নিকট অনুভূত হয়। এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব নূরন্নবী চেৌধুরী। তিনি তৎকালীন মেহেরপুর পেৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব শেখ আব্দুর রহিম সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর মেহেরপুর কলেজ নামকরনের মধ্য দিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথমে Meherpur Multilateral Model High School (বর্তমানে মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) এর নব নির্মিত ভবনে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬২ সালে প্রায় ২০ একর জমির উপর বর্তমান অবস্থানে কলেজ স্থানান্তর হয়। ১৯৬২ সালের ১ জুলাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ :

অধ্যক্ষ : জনাব মো: রফিকুল আলম
শিক্ষকবৃন্দ : মো: শহীদুল্লাহ খান (বাংলা)
দিগম্বর দাস (ইংরেজী)
মো: ইয়ামিন আলী (কমার্স)
মো: ইদরিস আলী (কমার্স)
মো: মঞ্জুরুল আলম (দর্শন), প্রমুখ।
এছাড়া জনাব এ্যাড. আব্দুর রাজ্জাক ও এ্যাড. হাফিজুর রহমান যথাক্রমে ইংরেজী ও বাংলা বিষয়ের অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রতিষ্ঠাতা গভর্নিং বডি :

  1. শেখ আব্দুর রহিম (পৌর চেয়ারম্যান)
  2. এ্যাড. আবুল হায়াত
  3. এ্যাড. নলিনাক্ষ্য ভট্টাচার্য্য
  4. মহাতাব আলী খান
  5. জনাব নূর বক্স
  6. সুরজমল আগরওয়ালা
  7. মো: আব্দুল কাদের , প্রমুখ।

প্রতিষ্ঠাকালীন অফিস স্টাফ

করণিক :
১। জনাব মো: মফিজউদ্দিন
২। জনাব আব্দুল হামিদ খান।
পিয়ন :
১। মো: ইদরিস আলী
২। মো: মজিবর রহমান,
৩। মো: কলিমউদ্দিন শেখ।
নৈশপ্রহরী :
১। মো: মাজেদ মিয়া,
২। মো: কাবাতুল্লাহ মিয়া।

মেহেরপুর কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ

(১)মো: আতাউল হাকিম (লালমিয়া)
(২)মো: আলাউদ্দিন
(৩)মো: আব্দুল আওয়াল
(৪)মরহুম শফিকুর রহমান বাদশা
(৫)মরহুম কবির খান
(৬) ফজলে রাব্বি রবি
(৭)মো: তাহাজউদ্দিন

(৮)শ্রী প্রতাপ দত্ত
(৯)মো: আবুল কালাম
(১০)মো: সুজাউদ্দিন
(১১)মো: কদম রসুল
(১২)মো: সরোয়ার হোসেন
(১৩)মরহুম মোজাম্মেল হক

(১৪)মো: বদরুজ্জামান বদর
(১৫)রহিমা খাতুন
(১৬)জিন্নাতুল আরা জোছন
(১৭)রেখা
(১৮)দিলারা বেগম
(১৯)আয়েশা সিদ্দিকা, প্রমুখ

মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঐতিহাসিক মেহেরপুর জেলার প্রবেশদ্বারে মেহেরপুর কুষ্টিয়া সড়কের পূর্ব পার্শ্বে এবং মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে মেহেরপুর সরকারি কলেজটি অবস্থিত। মেহেরপুর জেলার এটিই একমাত্র উচ্চ শিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৬ সাল থেকে স্নাতক (পাস) পর্যায়ে কলা ও বাণিজ্য কোর্স এবং ১৯৭৭ সাল থেকে স্নাতক (পাস) বিজ্ঞান কোর্স চালু হয়। অত:পর ১৯৭৯ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ০৪টি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, অর্থণীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) অনার্স কোর্স চালু হয়। ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটি অত্র এলাকার জনগণের প্রধান জ্ঞান বিতরণের কারখানা হিসেবে নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করে অনেকে রাজনীতিক, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী হিসেবে ও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কলেজে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়বে মনোরম ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, সুন্দর ফুলের বাগান। কলেজের মূলভবনের পিছনে এলাকার বিখ্যাত আমবাগান। সরকার এ বাগান থেকে প্রচুর রাজস্ব পেয়ে থাকে। কলেজ আঙ্গিনায় প্রচুর বনজ ও ফলজ আম, কাঁঠাল, নারিকেল কিছু ঔষধি নিম অন্যান্য বৃক্ষ বিদ্যামান যা কলেজের পরিবেশকে শান্ত ও মনোরম করে রেখেছে।